বারে বারেই দেখেছি , সত্যিকার যুদ্ধে অথবা গৃহযুদ্ধে আঘাত নেমেছে মেয়েদের ওপরে, শরীরী নির্যাতন, ধর্ষণ। লিবিয়ার মেয়ে সিরিয়ার মেয়ে সার্বিয়ার মেয়ে কোরিয়ার মেয়ে ভিয়েতনামের মেয়েরা এক হয়ে গেছে কোথাও। এখন দার্শনিক প্রশ্ন, ধর্মের প্রশ্ন, নানাধরণের বড় ছোট তাত্ত্বিক প্রশ্ন নিয়ে লড়াই চলে দু পক্ষের। মধ্যে থেকে মেয়েরা হয় সে লড়াইয়ের যুদ্ধক্ষেত্র।
আসলে কোরান থেকে অনেক দূরে সরে এসে হানাফি নামে এক তেরোশো বছর আগেকার আইনজ্ঞ যে কথা বলেছিলেন, তাঁর কথাকে এতদিন পরেও মান্যতা দিয়ে চলা হানাফি সম্প্রদায়ের ( সুন্নিদের চার মজহাবের বা খন্ড সম্প্রদায়ের একটি) এই প্রথাকে গোটা পৃথিবী বর্জন করেছে, ভারতেও অধিকাংশ মুসলিম এর বিরোধী। শুনতে পাই পৃথিবীর আর সব মুসলিম প্রধান দেশে, এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশেও, এই অতি অন্যায় পদ্ধতি আইন করে তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু আমাদের এই ভারতে চালু করা গেল না। আজকের দিনেও তাই মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের বলে চলে এই মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক প্রথা। সুপ্রিম কোর্ট যখন বিধান দেয় যে এই পদ্ধতি উঠিয়ে দেওয়া হোক, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড রে রে করে আসেন। অথচ নারীদের অধিকারের বেশ কিছু মুসলিম সংগঠন বহুদিন ধরে লড়াই করছেন তিন তালাক তুলে দিতে। তাঁদের কন্ঠস্বরকে ডুবিয়ে দিচ্ছে একদিকে এই মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। আর, সংখ্যাগুরু হিন্দুরা ভাবছেন, সারাভারতের গোটা মুসলিম সম্প্রদায়ই বুঝি চান এই পদ্ধতি থাকুক। মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী প্রচারও প্রচুর হাওয়া পাচ্ছে তাইই।
দুপক্ষের কন্ঠস্বরই জোরালো। আর মধ্যখানে পড়ে গেছে মেয়েদের জীবন, তাদের বিবাহিত জীবনের সুরক্ষাহীনতার বিষয়টি। তিন তালাক বর্জনের ডাক বহুদিন ধরে দিয়েছেন মুসলিম মেয়েরাই। শাহবানুর কেস-এর উপর রায়টি তো বিখ্যাত। দেখতে দেখতে তাও হয়ে গেছে ৩০ বছর এর উপর। কিন্তু এখনো কিছু ধর্মান্ধ ও প্রথার বিষয়ে চূড়ান্ত কট্টর ব্যক্তি মুসলিম সমাজকে “পশ্চাতে টানিছে!”
পুরুষতান্ত্রিক যে কোন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মতই এটিও অবিলম্বে উৎখাত হোক, আমরা চাই। যেখানে টেলিফোনে তিনবার তালাক বললেও একটি মেয়েকে বিবাহবিচ্ছিন্ন করে ঠেলে দেওয়া যায় অনিশ্চিতির গহবরে, সেই অন্যায় পদ্ধতি কোনভাবেই হতে পারেনা কোন ধর্মের মূল কথা।
The beliefs, views and opinions expressed in this article are those of the author and do not necessarily reflect the opinions, beliefs and viewpoints of Soi or official policies of Soi.